
১. শব্দ
নদীটার জল অনেকদিন ধরে ঘোলা। আগে এর বুকে আকাশের ছায়া পড়ত। নীল আর সবুজ মিশে যেত একসাথে, যেন পুকুরের তলায় ঝুলে থাকা একটা খোলা আকাশ। বর্ষায় ফুলে উঠত জল, নৌকার ছায়া দুলত তার বুকে। শীত এলে সরু হয়ে আসত স্রোত। তখন মাছ ধরা, চড়ুইভাতি। বাতাসে পচা শ্যাওলার গন্ধ থাকত না এখনের মতো। ভর্তি থাকতো শুকনো পাটের তেতো ঘ্রাণ, দূরে কোথাও খেজুরের রসের টাটকা সুবাস। নদীর ধারে বসে থাকত বৃদ্ধেরা, ছিপ ফেলত জলে। কত পাখির আনাগোনা — নীলকণ্ঠ, মাছরাঙা, চাতক, বক, হাঁস, আরও কত নাম না জানা পাখি। ভোর হলে ডাক ভেসে আসত কোকিলের, শালিকের। দূরে কোথাও কাঠঠোকরার ঠকঠক শব্দ।
এখন? নদীর তলায় জমে থাকা শেওলা, থমকে থাকা জল। চারপাশের গাছগুলো ধুলোয় ধূসর, পাতায় হলুদ ছোপ। কোথাও আর শোনা যায় না জাল ফেলার শব্দ, জলের গন্ধমাখা বাতাসও হারিয়ে গেছে। কোকিলের ডাক নেই, নেই দোয়েলের, চাতকের। বটগাছের ডালে শুধু একঝাড় বাদুর ঝুলে থাকে। টিকে আছে শুধু কাক, সন্ধ্যায় শোনা যায় পেঁচার ডাক।
বড়মা জানেন, ক্ষয়ে গেছে শুধু নদী নয়, সময়ও।
একটা সময় ছিল, সকাল মানেই নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ানো। সম্পত্তি, টাকা, এসব ভাবার দরকারই পড়ত না। ওরাই এই মাটির ছিল, মাটিও যেন ওদের চিনত। নদী ছিল, ছায়া ছিল, বন ছিল। গরম দুপুরে ঝোপের তলায় বসলে ঠান্ডা লেগে যেত, পায়ের নিচে খালি মাটি, ঘাসের নরম শিরশির। সব যেন ওদের সঙ্গে কথা বলত। চারপাশে কত শব্দ ছিল। সংসারের, জীবনের।
ভোরের হালকা আলো ফুটলেই শরীরটা যেন কেমন করত। পা দুটো যেন নিজে থেকেই নদীর দিকে চলে যেত। শালপাতার থালায় ঠান্ডা পান্তা ভাত, হাতে লঙ্কা-পেঁয়াজ। বড়মা গিয়ে বসতেন পুরনো বটগাছের তলায়, পাশেই পান্থশালার ছায়া। ভাঙা কাঠের বেঞ্চ পড়ে থাকত একপাশে।
ওখানে বসত গ্রামের আরও কত মানুষ। বৃদ্ধরা বাজারে যাওয়ার আগে নদীর ধারে দাঁড়াত, পা ধুত, গল্প করত। কে কোন শহরে গেল, কার চিঠি এল, কে ফিরবে, এসব কথা এখানেই হত। দূর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসত কারো হাঁক, “বাজারে যাবি না, আয়!”, “ওই ছেলেটা ঢাকায় কাজ নিয়েছে রে, শুনলি?”, “মাইয়াটার বিয়া পাক্কা হইছে, অহন আর দেরি নাই!!”
শীতের সকালে কুয়াশার ভিতর বসে পিঠেপুলি খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল। আগুনের পাশে বসলে মুখ গরম লাগত, কিন্তু পিঠের দিকে ঠান্ডা লেগেই থাকত। বিকেলে উঠোনে নারকেলের নাড়ুর গন্ধ ভাসত, মেয়েরা গোল হয়ে বসে কাজ করত। সুঁচ-সুতো নিয়ে কাঁথা সেলাই, পুরনো দিনের কথা। কেউ হয়তো পাশ থেকে ফিসফিস করে বলছিল, “শোনো না, ওই বাড়ির বড় মেয়ের কি একটা হয়েছে…!”
গ্রামে তখন পঁচিশ-তিরিশটা ঘর ছিল। দশ বছর আগেও উঠোনে হাঁকডাক উঠত। সকালের আলো ফুটলেই উঠোনে চলে আসত বউ-ঝিরা। উনুনে খড় ধরালে প্রথমে ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী উঠত, চোখ জ্বালা করত, কারও কারও কাশি উঠে যেত। তারপর ধোঁয়া একটু একটু পাতলা হতো, আগুন ঠিকমতো জ্বললে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। ওদিকে, পুরুষরা ততক্ষণে তাড়াহুড়ো করে চিঁড়ে-মুড়ি মুখে দিয়েই কাজে বেরোত। কেউ লাঙল কাঁধে নিয়ে, কেউ খেজুরগাছে ওঠার জন্যে গামছাটা নিয়ে। কেউ গরু-মোষের দড়ি খুলতে গিয়ে শাপশাপান্ত করত। জেলেরা নদীর দিকে ছুটত, খুঁটি-জাল নিয়ে। পেছন থেকে কেউ হেঁকে বলত, “ও দ্যাখ, আজ জোয়ার আসবে!” কেউ কোমরে মুড়ির পুটলি গুঁজে কাঠ-শালপাতার খোঁজে বনে ঢুকত। ছেলেরা বাবার সঙ্গে ফাঁদ নিয়ে বেরোত। কিছু ছেলে আবার চোখ রাখত গাছের ডালে, মৌচাকের গন্ধ শুঁকে আরও ভেতরে নামত। পেছন থেকে মা’দের “বনদেবী মান রেখো” শোনা যেত!
হাটের দিনে সব গমগম করত। দড়ির গিঁট টানটান করা, বস্তায় শাক-সবজি ঠেসে ভরা, বাঁধাকপি, কুমড়ো, চালকুমড়ো, হাড়িয়া, খেজুর রস… সব উঠে যেত গরুর গাড়িতে। ভ্যানগাড়ি শহর থেকে আসতে শুরু করেছিল, কয়েকজন সেটার হাতেখড়ি নিয়েছে, বাকিরা ভাবছিল, টাকা জমলে আমরাও নেব একটা। প্রায় পুরো গ্রাম হাটের দিন জড়ো হতো। চারিদিকে “ঠাকুর দেখো ওদের…” “দুগ্গা দুগ্গা…” “সাবধানে ফিরো”র স্বর উঠত! সবাই ফিরলেই সন্ধ্যায় উৎসব বসত। বনদেবীকে উৎসর্গ করে গান বাজনা, নৃত্য, খাওয়া দাওয়া, হাঁড়িয়া পান চলত অনেক রাত পর্যন্ত।
এখন বেশিরভাগ বাড়ির দরজায় তালা। কোনো কোনো চাল ভেঙে পড়েছে। জানালার ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে। মেঝে ভর্তি ধুলো। শুকনো পাতা দোরগোড়ায় আটকে। গাছের পাতায় হলুদ ছোপ। নদীর জল নড়ে না, পাড়ে শেওলা জমে দিনের পর দিন।
গ্রামে কুড়ি-পঁচিশ জনও নেই হয়তো। বিকেলে যারা টিকে আছে, তারা এসে বসে গ্রামে ঢোকার মুখে, কাঁচা রাস্তার পাশে। খেজুরগাছগুলোর তলায় বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে। যেন অপেক্ষা করলেই আবার চেনা পায়ের শব্দ আসবে। একদিন ঠিক আসবে।
কিন্তু বহুদিন কেউ আসেনি। চেনা কণ্ঠস্বর শোনা যায়না।
২. ডাক
বিকেলের আলো ম্লান, ধুলো মাখা শেষ রোদের আলো টিকে। গ্রামে ঢোকার একমাত্র কাঁচা রাস্তা ধরে আসছে দুজন।
একজন লম্বা, চুলে পাক ধরেছে, গায়ে মলিন পাটের পাঞ্জাবি। হাতে শক্ত করে ধরে আছেন একটা কাগজের ফাইল। অন্যজন তরুণী, এক হাতে ব্যাগ চেপে ধরা, চোখে বিস্তর কৌতূহল, চারপাশে তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু পথের ধুলোয় পা শ্লথ, কাঁধ কিনচিত ঝুঁকে।
এখানে বাইরের মানুষ তেমন আসে না। যারা আসে, তারা হয় হাটের দোকানদার, নয় সরকারি কর্মচারী। নয়তো পথ হারানো কেউ। কিন্তু এরা কেউই তেমন নয়। হাঁটাচলা, চোখের দৃষ্টি, মুখের ভাব.. কেমন যেন একটা অচেনা ছাপ।দূরে উঠোনের কোণে বসে থাকা কয়েকজন বৃদ্ধা একটু নড়ে চড়ে বসে। ধানের গাদার পাশে কয়েকটা শিশু দাঁড়িয়ে আছে, ফিসফিস করছে নিজেদের মধ্যে। ড. নিত্য সমাজদার থামেন। কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছেন। কেউ কিছু বলে না, অদ্ভুত থমকে সব। শেষমেশ তিনি ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করেন।
ততক্ষণে সামনের খেজুর গাছের তলা থেকে এক বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়েছেন। শুকনো শরীর, কাঁধে ধুলোমাখা গামছা, চোখে সন্দেহ, মুখে ক্লান্তি জমে আছে। “তোমরা কেডা?” প্রশ্নটা সোজাসাপ্টা।
নিত্য সমাজদার একটু হেসে কাগজটা এগিয়ে দেন। লোকটা হাত বাড়ায় না। সেরকমই দাঁড়িয়ে থাকে, মুখের রেখা শক্ত হয়ে আসে, যেন নতুন কোনো বিপদের অপেক্ষায়। ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে। “এটা কি খেয়ালি গ্রাম?” ড. সমাজদার হাত জোড় করেন। কেউ গ্রামের নাম শুনে এসেছে। অনেক বছর পর। কোনো কুসংবাদ? বৃদ্ধ সামান্য মাথা নাড়েন, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তার মুখের দিকে।
“আমরা লিঙ্গুইস্ট, ভাষার গবেষক। এই গ্রামের পুরনো ভাষা নিয়ে কাজ করছি,” সমাজদার বলেন। চারপাশের নির্লিপ্ত দৃষ্টি দেখে একটু থেমে আবার বলেন, “আমরা ভাষার মানুষ, পুরনো কথা খুঁজি, যেগুলো হারিয়ে গেছে।” লোকটা অবাক হয়ে বলে, “ভাষা… কি কাম?”
এবার মনীষা এগিয়ে আসে। হাত জোড় করে মাথা একটু নিচু করে বলে, “দাদু, আমরা হারিয়ে যাওয়া কথা লিখে রাখি।”বৃদ্ধ ঠোঁটে তামাক চেপে চিন্তিত চোখে তাকায়। একটু চুপ থেকে বলে, “হারা কথার খোঁজ? মানুষ নাই, কথা থাকবে কেমনে?”
৩. বাসন্তী
গ্রামে এখন যারা আছে, তাদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ। ছেলেরা চলে গেছে — দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বাই, দুবাই। কেউ আর ফেরেনি। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি গেছে, কেউই আর ফিরে আসেনি। এখন যারা বেঁচে আছে, তারা দিনের পর দিন মাটি খুঁড়ে ফসল তুলতে জানে, খরার সময় একবেলা খেয়ে কাটাতে জানে, কিন্তু ভবিষ্যৎ বলে কিছু বোঝে না। পুরুষেরা বাজারে সামান্য কিছু নিয়ে যায়, গুঁড়ো হলুদ, শুকনো লঙ্কা, পাটশাক। মেয়েরা উঠোনে বসে সেলাই করে, ছেঁড়া কাপড় ঘষে আরও কিছুদিন পরার উপযুক্ত করে। আজকাল এক কাপড়ের এজেন্ট এসে কিছু হাতের কাজ করিয়ে নিয়ে যায়, তাতে কিছু দিন উনুন জ্বলে। তবু সন্ধ্যায় একটা উঠোনের অনেকে জড়ো হয়। পায়ের কাছে শালপাতায় রাখা চিঁড়ে, খেজুর গুড়। বাতাসে মহুয়ার হালকা গন্ধ ভাসে। সেইসব সন্ধ্যায় বড়মা কথা বলেন।
“ওগো ভাষা লাগবি? যা, বড়মার কাছে যা গা।” সব শুনে এক বৃদ্ধা বললেন। তার চোখের নিচে গভীর ভাঁজ, হাতে নারকেলের মালা গাঁথার পুরনো অভ্যাস। গ্রামের পুরনো সবকিছু এখন বড়মার মধ্যেই টিকে আছে।
অনেক বছর আগে বড়মার আসল নাম ছিল বাসন্তী হাঁসদা। এখন সবাই বলে বড়মা। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন তার বাবা নদীর ওপারে সাঁওতালদের সর্দার ছিলেন, জঙ্গল পাহারা দিতেন। বড়মার মা বাঁশের চালুনি বানাতেন, মহুয়ার রস থেকে হাড়িয়া তৈরি করতেন। তখন এ গ্রামে আরও বাড়ি ছিল, উঠোনের পর উঠোন ছেয়ে যেত সজনে ফুলের গন্ধে। বর্ষাকালে নদীর জল ফুলে উঠলে, দড়ির নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়া যেত না। সন্ধ্যার আগে আগে কেউ না কেউ বাজনা বাজাত। তাঁর বাবা মাদল বাজাতে পারতেন। এখন? কেউ বাজায় না।
কেউ আর শোনে না। উঠোন ফাঁকা।
“হেগো দেশ ভাগ করলো, আমরা ভাগ হইলাম রে।”
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হল। নদীর ওপারে যারা ছিল, তারা ওপারেই রয়ে গেল, এপারেরা এপারে। বড়মার বাবা বলতেন, “এই মাটি আমাগো, নদীও আমাগো, তহন ভাগ কইরা নিল কেমনে?” সে বছর মাঘ মাসে, একরাতে নদীর পার থেকে মশাল হাতে কিছু মানুষ এপারে চলে এলো। কেউ তাড়া খেয়ে, কেউ ভয়ে, কেউ অর্ধেক সংসার ফেলে রেখে পালিয়ে এলো। সেদিন বড়মার মা গোয়ালঘরের পাশে মাটির হাঁড়ি চেপে বসে ছিলেন। দুধের সর তখনও শক্ত হয়ে জমেনি। বাইরে তখন শোঁ শোঁ বাতাস। দূরে কোথাও বাঁশের ঝোপের আওয়াজ, কেউ একটা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করছিল, “চিঠিপত্র নেবি? জমির দলিল?” আরেকজন উত্তর দিয়েছিল, “ভাই, জীবন লইয়া টিকতে পারি, এই কাগজ লইয়া কী হইবো?” বড়মার মা সরের উপর চামচ ঠেকিয়ে থেমে গিয়েছিলেন। চোখ তুললেন না, শুধু বললেন, “আমাগো কথা, আমাগো জমিন… কাগজে লিখলে থাকবো?” তারপর আবার হাত নাড়লেন, দুধ নাড়তে লাগলেন, যেন কিছুই হয়নি।
বড়মার বাবা-মা সীমান্ত পার করতে পারেননি। বড়মা পালিয়ে এলেন এক দূর আত্মীয়ের সাথে, কিন্তু তার ভাষা আর কখনো পুরোপুরি ফেরত এল না। আবার অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। বড়মার এই গ্রামেই বিয়ে হয়েছিল, সে তখন অনেক ছেলে-মেয়ের মা।পরে, নতুন গ্রামে, নতুন সংসারে, তিনি চেষ্টা করলেন নিজেকে নতুন ভাষায় গড়ে নিতে। সরকারী স্কুলের বইগুলো বাংলা শিখিয়ে দিল, কিন্তু কেমন যেন শূন্য লাগত ভিতরে। তার ছেলেমেয়েরা আর সেই পুরনো ভাষাটা শিখল না, তাদের কাছে বড়মার মুখের বুলি ছিল একখানা দূর অতীতের ছায়া।
এরপর একাত্তর এলো।। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ওঠার মতো করে গ্রামের মানুষ ছড়িয়ে গেল। কারও ছেলে যুদ্ধে গেল, কেউ নদী পেরিয়ে ওপারে পালালো। যারা থেকে গেল, তারা টিকে থাকল বনে, জঙ্গলে। বড়মার মা তখনও বাঁশের চালুনি বানাতেন, কিন্তু হাড়িয়া বিক্রি কমে গিয়েছিল। “লোক নাই, রে। লোক নাই।” বড়মা জানেন, মানুষ গেলে তাদের ভাষাও চলে যায়।
যুদ্ধ শেষ হতেই এল নতুন মানুষের সরকার। সেই সরকারের লোকেরা বলল, “তোদের ভাষায় কাজ নাই। এই ভাষা শিখ, নইলে পেছনে পড়ে থাকবি!” স্কুল হল, শহরের ভাষা এল। ছেলেরা বই পড়তে শিখল, শহরের ভাষা শিখল। “এই ভাষা কইরা চাকরি পাইবি,” শিক্ষক বলতেন। তখন থেকে বড়মাদের ভাষা আস্তে আস্তে কমে এল। যে ভাষা একসময় নদীর মতো বয়ে যেত, এখন তা শুধু বড়মার মুখে বেঁচে আছে। গ্রামের সবাই জানে, বড়মা যা জানেন, তা আর কেউ জানে না। তাই তারা নিত্য সমাজদার আর মনীষাকে বড়মার কাছে নিয়ে গেল।
৪. বড়মা
সেই গ্রামের এক কোণে ছোট্ট মাটির বাড়ি। সন্ধ্যার আলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। দাওয়ায় বসে আছেন বড়মা, ঠোঁটের পাশে খৈনির গুলি চেপে। তাঁর চোখে গভীর রাত, শরীরে সময়ের খাঁজ। একসময় এই উঠোনে মানুষের আনাগোনা ছিল, এখন শুধু দমকা বাতাস।
হঠাৎ নতুন আওয়াজ। জুতোর শব্দ? গ্রামে কেউ জুতো পরে হাঁটে না, মাটিতে পায়ের ছাপ পড়ে। এই শব্দ আলাদা, বাইরের। দরজার পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধা শিরদাঁড়া টান করে বসেন।
একজন মাঝবয়সি লোক হাঁটছে ধীরপায়ে, চারিদিকে তাকাতে তাকাতে, যেন চারপাশের মাটির গন্ধ বোঝার চেষ্টা করছে। পেছনে এক তরুণী, খোঁপায় কয়েকটা চুল এলোমেলো, মুখ শুকিয়ে গেছে, কিন্তু সে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে বড়মার দিকে।
মাটির উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার নামছে। বোধহয় অমাবস্যা কাছেই। পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধরা চুপচাপ, ওদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। কারা যেন একখানা হ্যারিকেন এনে বসালো। জমায়েতে সবার মুখে আবছা, কাঁপা-কাঁপা আলো, যেন আলেয়া। কেউ কিছু বলে না, কিন্তু কারও দৃষ্টি কৌতূহলী, কারও সন্দিহান, কারও চোখে পুরনো ক্লান্তি। এক বৃদ্ধা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, হাতে দুটি শালপাতা। পাতার উপর চিঁড়ে আর খেজুর গুড় রাখা, “লে নাতুনি, ভাইপো, খাইয়া লও। পথের মানুষ, মেহমান খালি হাতে ফেরায় না।” মনীষা ইতস্তত করলেও, নিত্য সমাজদার দুই হাতে পাতাটা নেন।
সাঁওতালরা গরিব হলেও, অতিথি ফেরায় না। এটাই তাদের রীতি, যা কিছু আছে, তা থেকেই কিছু দেওয়া। নিত্য সমাজদার মুখে এক চিমটি তুলে নেন, ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান, “আহা, অমৃত!” তিনি মৃদু হাসেন, “সত্যি, সেই দুপুরের পর থেকে আর কিছু খাওয়া হয়নি। প্রাণে আরাম এলো!” বড়মা এবার একটু নরম হাসলেন, চোখের কোনায় ছোট্ট ভাঁজ পড়ল।
মনীষা এবার আস্তে আস্তে বলে, “শব্দ হারায় যায় বড়মা। মানুষ গেলে, ভাষা থাকে না। তাই আমরা কাগজে রাখি, যেন পরে কেউ শিখতে পারে।” বড়মা শোনে, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়েন, “শব্দ ধরা যায় না রে, কাগজে বাইন্ধা থাকে না। হাওয়ার মতো, ধরলি গেল, ছুঁইলি নাই!” আরেক পাশের বৃদ্ধ ধীর গলায় বড়মাকে বলে, “গাইতে পারে, কইতে পারে, কিছু থাকবো। একেবারে নাই হওনের থিকা ভালো।”
বড়মা আবার খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন, যেন কোথাও কিছু শুনতে পাচ্ছেন। তারপর ধীরে মাথা নাড়েন। “ল্যাখো। তয় কাগজে রাখলে কথা মাটিতে ফিরবো না। মানুষ গেলে, সব যাইবো।”
নিত্য সমাজদার চুপচাপ শোনেন। মনীষা খাতার পাতা উল্টায়।
৫. বন্ধন
বড়মা চুপ করে বসে আছেন। ঠোঁটের পাশে খৈনির গুলি, ঠোঁটের কোণে কি একটু হাসি? কিছু বোঝা যায় না। নিত্য সমাজদার আর মনীষা অপেক্ষা করছে, কিন্তু কে কার জন্য?
একসময় বড়মা হালকা গলায় বলে উঠলেন, “বুঝছস নাতুনি, কথা বাঁচাইতে আইলি, ঠিক হইলো। কত্তো কত্তো কথা, সব হারাই গ্যালো। আগে আমার মায়ের মুখে শুনতাম, তার মায়ের মুখে শুনছে, আর আমিও শুনাইছি। এখন শোনার কেউ নাই।” তিনি পিক ফেললেন মাটিতে। “কথা তো ছিল গানের মতো, নদীর মতো। এট্টা শুইন্যা মন ভরতো, আচ্চা তুই কি কইলি? কাগজে বাইন্ধা রাখবি?”
মনীষা মাথা নাড়ল। “হ্যাঁ বড়মা, আমরা লিখে রাখি, যেন কেউ একদিন পড়তে পারে।” বড়মা তাকিয়ে রইলেন একদৃষ্টে, যেন মনীষাকে পড়ছেন। তারপর ধীরে বললেন, “ল্যাখ, কাগজে ল্যাখ। আমাদের কথা কাগজে থাকবো, কিন্তু আমাগো কেউ চিনবো না রে।”
এই প্রথম নিত্য সমাজদার একটু নড়েচড়ে বসলেন। এতক্ষণ তিনি শুধু শুনছিলেন, এবার যেন কিছু বলতে চাইছেন। “আপনারা এরকম বাংলা কেমন করে শিখলেন? আগে এই গ্রামে নিশ্চই অন্য রকম কথা হতো?”
বড়মা হাসলেন, হাসতে হাসতে বললেন, “এট্টা দিন আগে কারা আইছিল জানো? হাটে গেলাম, দেখি দুইখান লোক কইতাছে, বড় ভাষা শিখলে ভালো কাম পায়, শহর যায়। আমি কইলাম, তয় আমাগো ভাষা খারাপ? এই কথা কইলে ওরা হাসলো। আমি আর কিছু কই নাই।” তার গলায় ক্লান্তি, এক ধরনের দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে। “শিখলাম শহরের ভাষা, কিন্তু আমার ভাষা গেল কই? আমার মায়ের মুখের ভাষা, আমার দাদির মুখের ভাষা, সেইডা কই? কাগজে বইন্ধা থাকার জন্য? নাকি লোকের হাটে গিয়া শুনবার জন্য?”
এক পাশে বসা বৃদ্ধ এতক্ষণ চুপ ছিল, এবার মাথা নাড়ল। “মানুষ গেলে ভাষা যায়, ভাষা গেলে মানুষ যায়। সব একই কথা। সব একসাথে গেছিল।”
মনীষা খাতার পাতায় হাত রাখল, কিন্তু কিছু লিখল না। তার মনে হল, শুধু শব্দ লিখলে কি সত্যিই কিছু টিকে থাকবে? এই ভাষা কি কাগজের মধ্যে আটকে রাখা যায়? তার হাত থমকে গেল। বড়মা তাকিয়ে থাকলেন, যেন বুঝতে পেরেছেন। বলে উঠলেন, “গান ল্যাখ, গান তো টিকবো। কাগজে না, মানুষের মনে। এককালে মাদল বাজতো, গান উঠতো, আমার মা বলতো, গান থাকলে মানুষ টিকে থাকে। আরে রে, এখনতো গানের মানুষও নাই।”
নিত্য সমাজদার কিছুক্ষণ চুপ করে বললেন, “আপনি কি গাইতে পারেন? যে গান আপনার মা গাইতেন?” বড়মা একটু চুপ করে থেকে ধীরে মাথা নাড়লেন। তার গলা কাঁপছে, নাকি বাতাসে শব্দ দুলে যাচ্ছে? খুব আস্তে, ভাঙা ভাঙা স্বরে তিনি একটা সুর তুললেন।
চারপাশে যে যার মতো বসে আছে, কিন্তু কেউ নড়ছে না। নিত্য সমাজদার পকেট থেকে মোবাইল বের করলেন। “আমি কি এই যন্ত্রে তুলে রাখতে পারি?” বড়মা গান থামিয়ে তাকালেন, একটু ভেবে বললেন, “কর গা, কাগজে লিখলে ফিরবো না, গান থাকলে টিকবো।”
মোবাইলের রেকর্ডার অন হলো। বড়মা আবার গাইতে শুরু করলেন। বাইরে বাতাস থেমে গেছে, মাঠের দিকে পাল্লা দিয়ে ঝিঁঝিঁর ডাক। রাত গভীর হচ্ছে। একসময় বড়মা গান থামালেন, চোখ বন্ধ করলেন। চারপাশে নীরবতা নেমে এল।
মনীষা এবার খাতার পাতায় কলম চালালো, কিন্তু তার হাত কাঁপছে।
৬. সংলাপ
বড়মা একসময় উঠে দাঁড়ালেন। “কাল আবার আইবা। রাত হইছে, এখন থাকো। বাড়ির ভিতরে খালি ঘর আছে গা। তোদের উঠতে কষ্ট হইবো না। খালি ঘরগুলা তুইলা রাখি, মানুষ কখন আইবো, কডা কয়? জায়গা থাকলে মানুষ ফিরতে পারে, ভাষাও ফিরতে পারে।” একজন বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চল, শোবার জায়গা দ্যাখাই।” আগুনের লালচে আলোতে বড়মার মুখ একবার উজ্জ্বল হয় উঠল, তারপর আবার অন্ধকারে মিশে গেল।
ঘরের ভেতর মাটির দেওয়াল, কাঁচা মেঝে, কাঁথা পাতা মাটিতে। একপাশে একটা পুরনো লণ্ঠন ঝুলছে, ক্ষীণ আলো পড়ছে পুরনো তাকে। নিত্য সমাজদার একটা খড়ের গদি টেনে নিয়ে বসলেন। মনীষা এক কোণে বসে আছে। তার চোখ খোলা, কিন্তু তার ভাবনাগুলো যেন দূরে কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় বৃদ্ধ মানুষটি এসে বললেন, “ঘুমাইতে পারবি তো? ঠান্ডা লাগছোস?” নিত্য সমাজদার একটু হেসে বললেন, “না, ঠিক আছি। সকালে আবার বড়মার সাথে কথা বলবো।” লোকটি মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে একবার শেয়াল ডেকে উঠল।
ভোরের প্রথম আলো উঠছে, দূরে কোথাও মোরগ ডাকল। নিত্য সমাজদার চোখ খুলতেই মাটির ঘরের ছাদে ফাটল ধরা খড়ের ছায়াগুলো দেখতে পেলেন। বাতাসে এখনো আগের রাতের গন্ধ লেগে আছে। তখনই বাইরে থেকে শোনা গেল খটখট আওয়াজ। কেউ যেন রান্নাঘরে হাঁড়ি নামাচ্ছে। মনীষা চোখ খুলে তাকাল, “ভোর হয়ে গেছে?” নিত্য সমাজদার দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখানে সকাল মানেই কাজের শব্দ।”
ঘর থেকে বেরিয়েই দেখলেনএকপাশে দাঁড়িয়ে বড়মা, দু’হাতে শালপাতায় কিছু খাবার ধরে আছেন। তাদের দেখেই বললেন, “এখনো উঠলা না? শহরের মানুষরা বেলা না উঠলে দিন শুরু হয় না নাকি?” নিত্য সমাজদার একটু হেসে বললেন, “আমরা শহরের মানুষ ঠিকই, কিন্তু আপনার ভাষা শুনতে এসেছি, ঘুমানোর জন্য না।” বড়মার মুখে একটুকরো ম্লান হাসি ফুটল। “আচ্ছা, চল গা, উঠোনে বসি। কথা ঘরে বইসা হয় নাকি? বাতাস লাগলে তবেই ঠিকঠাক মুখ খুলবো।”
নিত্য সমাজদার আর মনীষা উঠোনের এক কোণে বসে। একপাশে শালপাতায় খেজুর গুড়, চিঁড়ে, আর একটুকরো নারকেলের নাড়ু রাখা। বড়মা ধীরে বসে বললেন, “কাল রাইতের কথা মনে আছেগা? গান থাকলে মানুষ টিকে থাকে। কিন্ত তোরা গান জানস কই? কাগজে ধইরা রাখবি, তাই তো?” মনীষা মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ বড়মা, আমরা লিখে রাখি, যেন পরে কেউ শিখতে পারে।” বড়মা একদৃষ্টিতে তাকালেন।
“কিন্তু তোরা কি বুঝবি?” নিত্য সমাজদার একটু এগিয়ে এসে বললেন, “আপনার ভাষা আমরা শিখতে চাই। বুঝতে চাই।” বড়মা মাথা নাড়লেন, “তোরা কইস শহরের মানুষ ভাষা রাখবো? হেগো খেজুর রসের স্বাদ জানে? মহুয়ার গন্ধে ভোরবেলা চোখ খুলছে কহনো? জানস, এই গ্রামের কত ছেলে-মাইয়া শহরে গ্যালো? কেউ ফিরছে? কেডা ফিরছে? কেউ আসে নাই। শহর মানুষ নেয়, ফিরাইয়া দ্যায় কুনো কিছু?” নিত্য সমাজদার চুপচাপ শুনলেন। বড়মা এবার একটু এগিয়ে বসে বললেন, “আমার ভাষা কি শহরে বাঁচবে?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।
মনীষা একটু দ্বিধা করে বলল, “আপনার ভাষা না থাকলে, আপনার কথা কেও মনে রাখবে না। আমরা চাই, শহরের মানুষও একদিন পড়ুক, শুনুক, আপনাদের কথা ভাবুক।” বড়মা হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “তাহলে, লেখ।”
প্রথম দুদিন সহজ ছিল। নিত্য সমাজদার আর মনীষা খাতা খুলল। নতুন দিনের আলোয়, পুরনো শব্দেরা আবার কাগজে ধরা দিতে থাকল।বড়মা গান গাইলেন, পুরনো মন্ত্র বললেন, বাচ্চাদের জন্য রাতের গল্প বললেন। রেকর্ডার চলল, নোটবুকে লেখার শব্দ উঠল, কাগজের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল। ডঃ সমাজদার শব্দ ধরে বর্ণমালা বানালেন, স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ চিহ্নিত করলেন, শব্দের উচ্চারণ বিশ্লেষণ করলেন।
তৃতীয় দিন, মনীষা খেয়াল করলো সব শব্দ আছে, সব নথিভুক্ত, কিন্তু ভাষার স্বাদ আসছে না। রেকর্ডিং শোনার সময় মনীষা বুঝল কিছু একটা নেই।প্রথমে শব্দ, তারপর শব্দের ওজন। তারপর বুঝতে পারল। “এটা কী শব্দ?” বড়মা ধীরে ধীরে হাসলেন। “শব্দ না।” তিনি নিজের বুকের উপর হাত রাখলেন। “এটা নিঃশ্বাস।” মনীষার গায়ে কাঁটা দিল। ভাষা শুধু শব্দ না , ভাষা নিঃশ্বাস। ভাষা সেই বিরতি, যেটা আমরা শুনি না। বড়মা বললেন,“শব্দ মানে ধরে রাখে না, শব্দ মানে বাহন। শোনলে বাহন পাইবা, দেখলে হারাইবা।”
৭. নিঃশ্বাস
সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। নিত্য সমাজদার আর মনীষা শুধু ভাষা শিখল না, শিখল বড়মাদের জীবনের ছন্দ। শিখল কীভাবে ভোরবেলা গরুর দুধ দোহনের শব্দের সঙ্গে দিন শুরু হয়, কীভাবে মাঠের কাজের ফাঁকে কাঁধে গামছা ঝুলিয়ে গল্প হয়, কীভাবে শালপাতায় পান্তা ভাগ করে খাওয়া হয়। শিখল কাঁথা সেলাইয়ে ভাষার গল্প, শিখল নদীর ধারে বসে নিরবে সময় গুনতে। গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ তাদের পুরনো আত্মীয়দের নাম বলে দিলেন, যারা শহরে আছে, “ওগো খুঁজে দ্যাখো গা।” নিত্য সমাজদার বললেন, “যতদূর পারি, খুঁজব।”
এক সপ্তাহ পরে, বিদায়ের সময় এসে গেল। ফেরার আগের রাতে বড়মার কাছে এল নিত্য সমাজদার আর মনীষা। বড়মা উঠোনে বসে ছিলেন, খালি আকাশের দিকে তাকিয়ে।“তোরা কাল ফিরবি, কিন্ত আমাগো ফেরার রাস্তা নাইগা।” কেউ কিছু বলল না। “যা গা, যাত্রা শুভ হোক তোদের।”
পরের দিন সকালে বড়মাকে বিদায় জানাতে এল তারা। উঠোনে জড়ো হয়েছে পুরো গ্রাম — কেউ চুপচাপ, কেউ শোকের বোঝা বয়ে। নতুন কিছু বৃদ্ধ কৃষক, দূরের কিছু আত্মীয়। বড়মা ঘুমের মধ্যেই চলে গেছেন। রাতের আঁধারে নিঃশ্বাস মিলিয়ে গেছে বাতাসে। কাল রাতে সে কি জানত এটাই শেষ দেখা? বড়মার ছেলেমেয়েরা আসতে পারেনি, শহরের কাজ ছাড়তে পারেনি। শহর মানুষ নেয়, ফিরিয়ে দেয় না।
ডঃ সমাজদাররা একটা সফল রেকর্ডিং নিয়ে ফিরে গেলেন। কিন্তু জানতেন, সব হারিয়ে গেছে। কলকাতার ট্রেনে উঠে শুধু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। বাতাসে মিলিয়ে যাওয়া বড়মার শেষ বাক্যের মতো।

কেমন লাগল আপনাদের কাল্পসূত্রের এই গল্প? যারা আগে থেকেই আমার পাঠক, তাদের অনেক ধন্যবাদ। নতুন পাঠকদের স্বাগতম। আপনার মতামত বা প্রশ্ন জানালে ভালো লাগবে। আরো আলোচনা করতে চাইলে LinkedIn বা Medium-এ যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন!
#গল্প #বাংলাগল্প #কল্পগল্প #সাহিত্য #কৌতূহল #ফিকশন #ছোটগল্প #কাহিনি #কল্পসূত্র